শরীরের এমন জায়গায় মারত যেন বাইরে থেকে দেখা না যায়

আশির দশকে বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ রতি অগ্নিহোত্রী। এক দুজে কে লিয়ে, কুলিসহ একাধিক হিট ছবির নায়িকা তিনি। শুধু হিন্দি নয় তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালাম ও বাংলা ছবিতেও কাজ করেছেন রতি। ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকার সময়ই ১৯৮৫ সালে স্থপতি অনিল বিরওয়ানিকে বিয়ে করে অভিনয়জীবন থেকে দূরে সরে যান তিনি। বাইরে থেকে সুখী দাম্পত্যের গল্প শোনা গেলেও বাস্তবে তার জীবন ঢেকে ছিল গোপন অন্ধকারে।

বহু বছর পর এক আবেগঘন সাক্ষাৎকারে রতি জানান, বিয়ের শুরুর দিক থেকেই তিনি শারীরিক নির্যাতনের শিকার ছিলেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে হাসিমুখের আড়ালে তিনি লুকিয়ে রেখেছেন দুঃসহ যন্ত্রণা। নির্যাতন এতটাই পরিকল্পিত ছিল যে, চোট বা দাগ যেন বাইরে থেকে দেখা না যায় সেই জায়গাতেই বেশি আঘাত করা হতো। ‘সুখী পরিবার’-এর অভিনয় বজায় রাখতে এতে সুবিধা হতো বলেও জানান তিনি।

এত কিছু সহ্য করেও কেন সংসারে রয়ে গিয়েছিলেন? রতির ভাষায় দুটি কারণ ছিল। বিবাহবন্ধনের মর্যাদায় তার বিশ্বাস এবং বিয়ের মাত্র এক বছরের মধ্যেই জন্ম নেওয়া ছেলে তনুজ বিরওয়ানি। ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বারবার নিজেকে বুঝিয়েছেন একদিন হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু ২০১৫ সালের ৭ মার্চ পরিস্থিতির বদল ঘটে। সেদিন তনুজ পুনেতে শুটিংয়ে ছিলেন। হঠাৎ এক সহিংস ঘটনার পর রতি বুঝে যান এভাবে আর চলতে পারে না। তার বয়স তখন ৫৪। নিজের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এবার শেষ পর্যন্ত লড়াই করবেন।

এক সপ্তাহ পর রতি একাই পুলিশ স্টেশনে গিয়ে প্রথমবারের মতো নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি জানতে পেরে ছেলে তনুজ নিঃশর্তভাবে মায়ের পাশে দাঁড়ান। তিনি ওরলির ফ্ল্যাট ছেড়ে মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। পরে বাবার সাথে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করলেও রতি আর ফিরে যাননি সেই বাসায়। নতুন শুরুর জন্য তিনি চলে যান লোনাভালার বাংলোতে।

হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, রতি অগ্নিহোত্রী বর্তমানে বেশির ভাগ সময় কাটান পোল্যান্ডে, যেখানে তিনি বোন অনিতার সঙ্গে মিলে একটি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন। অন্যদিকে ছেলে তনুজ এখনও ব্যস্ত ভারতের বিনোদনজগতে।

দীর্ঘ নির্যাতন সয়ে অবশেষে মুক্তি রতি অগ্নিহোত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত আজও আলো ফেলে নারীর আত্মমর্যাদা ও বাঁচার লড়াইয়ের ওপর।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন